সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দূর্ণিতি ও অনিয়মের অভিযোগ
ঢাকার ধামরাইয়ে খাত্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আবু শামীম কবিরের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দূর্ণিতির অভিযোগ উঠেছে। চাকরি ক্ষেত্রে কাজে গাফিলতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানান অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। এ নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগও করেছেন স্থানীয়রা এবং প্রায় তিনশত জন স্থানীয় বাসিন্দারা ঔই শিক্ষকের বিরুদ্ধে গণস্বাক্ষর করেন। স্থানীয়দের দাবি হয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সঠিকভাবে তার দ্বায়িত্ব পালন করবে এবং হারানো গৌরব ফিরে আসবে নয়তো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাঁচাতে তাকে বদলি করা হোক।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, খাত্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আবু শামীম কবির বিদ্যালয়ের নানা অনিয়মের সাথে জড়িত। সেই সাথে অনুপস্থিতও থাকেন। বিদ্যালয়ে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেই নিজের ব্যক্তিগত কাজে চলে যান বলে জানা যায়। এছাড়া শামীম বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দ্বায়িত্ব পালনের পর প্রায় ৪৫০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে বর্তমানে রয়েছে ১৫০ জনের মতো। শিক্ষার মান খারাপ হওয়ায় শিক্ষার্থী অন্যত্র চলে গেছে। ২০২৩ -২৪ অর্থ বছরে ওয়াস ব্লকের ২০ হাজার টাকার কোন কাজ করেন নি । আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব বেনজীর আহমদ ও কুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমানের সাথে লিয়াজু করে নানা দূর্ণিতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। এলাকায় বেশ প্রভাব বিস্তার করেছিল। স্কুল বাদ দিয়ে সব সময় আওয়ামী লীগের সভা সমাবেশে উপস্থিত থাকতেন। স্কুলের নামে জমি দাতাদের কোন পাত্তাই দিতেন না। সব কিছুই চেয়ারম্যান লুৎফর রহমানের নির্দেশে কাজ করতেন শামীম।
অভিযোগ সূত্রে আরো জানা যায়, ৫ আগষ্ট সরকার পতনে যে সকল শিক্ষার্থী রাস্তায় আন্দোলন করেছে তাদের নামের তালিকাও করেছিলেন ওই শিক্ষক আবু শামীম কবির। তাদের নানা ধরনের হুমকি ও ভীতি প্রদর্শন করেছিলেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, খাত্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই রয়েছে ৩ টি ওয়াশ ব্লক ও ৩ টি বেসিং। যার মধ্যে ২ টি ওয়াশ ব্লক ব্যবহার না করার কারণে নষ্ট হয়ে গেছে। একটি বেসিং ব্যবহার করাই হয় না। অথচ অনেক স্কুল এসব ওয়াশ ব্লক ও বেসিং এর জন্য বছরের পর বছর ঘুরছে। দুটি ওয়াশ ব্লক ব্যবহার না করায় রাতে মাদকসেবিদের আড্ডা বসে বলে জানান এলাকাবাসী। প্রধান শিক্ষকের অবহেলার কারণে দিন দিন স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এক সময় ঔই বিদ্যালয়ে ৪ শত থেকে ৪৫০ শিক্ষার্থী ছিল।কিন্তু আবু শামীম কবির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করার পর থেকেই শিক্ষার্থী সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। বর্তমানে প্রায় ১৫০ জনের মতো শিক্ষার্থী রয়েছে বলে জানা যায়। অথচ ৪ তলা বিশিষ্ট আধুনিক মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাথে রয়েছে বিশাল খেলার মাঠ। শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার পিছনে রয়েছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের খামখেয়ালি পনা বলে জানা যায়।
এছাড়াও স্কুলে গিয়ে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। দুই জন নারী শিক্ষক ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অফিস কক্ষে বসে রয়েছে কিন্তু রাবিয়া নামে একজন নারী অভিভাবক শ্রেণি কক্ষে শিক্ষকের চেয়ারে বসে ক্লাস নিচ্ছেন। তিনি প্রায়ই ক্লাস নেন বলে জানান ওই নারী অভিভাবক। এতে শিক্ষকরা কিছুই বলেন না। দির্ঘদিন ধরে এই কাজ চালিয়ে আসছেন। অথচ শিক্ষকরা অফিস কক্ষে বসে গল্প করতে দেখা যায় আর ক্লাস নিচ্ছেন এক নারী অভিভাবক রাবিয়া । পরে জানা যায় ঔই নারী অভিভাবকও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবু শামীম কবির সম্পর্কে ভাবী। তাই তাকে কেউ কিছুই বলে না।
এমন কি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমানের নির্দেশে স্কুলের নামে জমি দান কারীদের দাতাসদস্য পদ থেকেও বাদ দেন শিক্ষক আবু শামীম কবির। নিজেই চলতেন রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে। এমনকি ইউনিয়ন পরিষদের ট্যাক্স উঠানোর লোকজনকে থাকার জন্য স্কুলের দুটি কক্ষ ছেড়ে দেন সাবেক চেয়ারম্যান লুৎফর রহমানের নির্দেশে। কিন্তু ওই সমর শিক্ষা অফিসার তাজমুন্নাহার জানতেন না। বিষয়টি তিনি অবগত হওয়ার পর মোহাম্মদ আবু শামীম কবিরকে সতর্ক করেছিলেন। এবং শোকজ লেটারও দিয়েছিলেন।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আবু শামীম কবিরের বিরুদ্ধে স্থানীয় বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ৫ আগষ্টের আগে শামীমের বিরুদ্ধে কোন কথা বলার সুযোগ ছিল না। তিনি লুৎফর চেয়ারম্যানের নির্দেশে চলতেন। স্কুলে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেই চলে যেতেন রাজনৈতিক প্রোগ্রামে। কেউ বলার কিছুই সাহস পেত না। আমরা তাকে একাধিক বার বলেছি আপনি এলাকার ছেলে। ঠিক মতো নিজের দ্বায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু তিনি সেই কথা কানেই নিতেন না।
তারেক আলী মাসুম বলেন, বর্তমানে স্কুলে শিক্ষার মান খুবই খারাপ। দিন দিন শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। যদি প্রধান শিক্ষক তার দ্বায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করেন তাহলে তিনি অন্যত্র চলে যাক। তার যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তারপরও স্কুলে শিক্ষার মান ভালো হোক। তিনি তো আগে হাজিরা খাতায় সই করেই চলে যেতেন। প্রতিদিনই বলে তার উপজেলায় কাজ থাকতো। এছাড়াও তিনি সরাসরি শিক্ষকতার পাশাপাশি রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন।
এ বিষয়ে ঔই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আবু শামীম কবির বলেন, একজন অভিভাবক স্কুলে আসতেই পারে। অনেক অভিভাবক আসেন। কিন্তু শিক্ষকের চেয়ারে বসে ক্লাস নিয়েছেন সেই বিষয়ে আমি অবগত নই। এছাড়াও রাজনৈতিক বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, স্কুলের মাঠে যদি রাজনৈতিক অনুষ্ঠান হয় আর তা যে সংসদ সদস্যই করুক আমাদের থাকতে হবে। তবে স্কুল বাদ দিয়ে রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে যোগদান এবং পূর্বে নিজের ইচ্ছে মতো পকেট কমিটির বিষয়গুলো অস্বীকার করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ মোবাখখারুল ইসলাম মিজান বলেন, খাতরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আবু শামীম কবিরের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে আমি অবগত রয়েছি। বিষয়টি যাচাই করার জন্য তিন জন সহকারী শিক্ষা অফিসারের একটি তদন্ত কমিটি দেওয়া হয়েছে। তাদের তদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।